হুমকিতে পরিবেশ

শেখ আনোয়ার

পরিবেশ দূষণের কারণে সমগ্র প্রাণীজগৎ এখন হুমকির সম্মুখীনপ্রখ্যাত পরিবেশবিজ্ঞানী ক্যালিন ওয়াকারের মতে, ভৌতিক রাসায়নিক ও জৈবিক কারণে পরিবেশের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তনই হলো পরিবেশ দূষণকয়লা, কেরোসিন, পেট্রোলিয়াম, ডিজেল, ইত্যাদি দহনের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফারট্রাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন, সালফার ডাই-অক্সাইড ও হাইড্রোজেন সালফাইট ইতাদি ক্ষতিকারক গ্যাস বায়ুতে নির্গমনের ফলে বায়ু দূষিত হচ্ছে ১৯৫০ সালে বায়ুমণ্ডলে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি মেট্রিক টনের কমবর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি মেট্রিক টনবৃদ্ধির হার অপরিবর্তিত থাকলে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করবেএর ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও বেড়ে যাবেবিগত ১০০ বছরে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৩ থেকে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসবিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে, আগামী ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা গড়ে ১.৪০ সে. থেকে ৩০০ সে. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবেতাপমাত্রার বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রে পানির উচ্চতা ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছেবায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আরো ৪.০ থেকে ৪.৫০০ সেলসিয়াস বেড়ে গেলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১.০ থেকে ১.৫ মিটার বাড়বেফলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাবেপরিবেশের এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্য সুস্থ জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে যাবেবায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের হার কমে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির একমাত্র কারণ হলো বৃক্ষনিধনকারণ, বৃক্ষ সালোক-সংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাণীর উপযোগী অক্সিজেন তৈরি করেও বিষাক্ত কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করে তাই বৃক্ষের পরিমাণ কমে গেলে অক্সিজেন প্রস্তুত এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের হারও কমে যাবেফলে পৃথিবীর পরিবেশ হয়ে যাবে বিষাক্তপৃথিবীর মোট স্থল ভাগের প্রায় ৪১২ কোটি হেক্টর বনাঞ্চল রয়েছেপ্রতিবছর গড়ে ৬০ লাখ হেক্টর বন নিশ্চিহ্ন হচ্ছেচাষযোগ্য জমির উপরিভাগের ৫০ কোটি টন উর্বর মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছেপরিবেশ সুস্থ্য রাখার জন্য মোট ভূমির শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকারদুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে মোট বনভূমি রয়েছে শতকরা ৯ দশমিক ৪৩ ভাগএর পরিমাণ ৩৫ লাখ ৫০ হাজার একর অথচ দুই দশক আগে বনভূমির পরিমাণ ছিল ৫৫ লাখ ৪৪ হাজার একরবর্তমানে বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষনিধনের অনুপাত ১ঃ৩বাংলাদেশে প্রতি বছরই জুলাই-আগস্ট মাসে বৃক্ষরোপণ অভিযান হলেও বৃক্ষের পরিমাণ তেমন বাড়ছে নাসম্প্রতি ১৮টি দেশের ৫০ জন বিজ্ঞানীর ৩ বছরের সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে বিশ্বের আবহাওয়া উত্তপ্ত হওয়ার কারণে শস্য উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং ২০৬০ সাল নাগাদ বিশ্বে ১শকোটি লোক অনাহারে কবলিত হবে

মানুষের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানি ছাড়া সুস্থভাবে জীবনযাপন সম্ভব নয়পানি দূষিত হলে খাদ্য ও বায়ু দূষিত হয়বর্তমানে পৃথিবীর মোট পানির শতকরা ৬০ ভাগই কলুষিতপানি দূষণের হার শতকরা ৬ দশমিক ৪ ভাগ বৃদ্ধি পাচ্ছেপানি দূষণের মূল কারণ হলো নর্দমার ময়লা, কারখানার বর্জ্য পদার্থ, মানুষ ও পশু পাখির বর্জ্য পদার্থ, কীটনাশকের ব্যবহার ও জলযানভূগর্ভে পারমাণবিক পরীক্ষা টক্সিক পদার্থের (যেমনÑ লেড, আর্সেনিয়াম ও নিকেল) উপস্থিতির কারণে বায়ু ও মৃত্তিকা দূষিত হচ্ছেপ্রতিবছর ৬৫ লাখ টন আবর্জনা ফেলা হচ্ছে সমুদ্রে

পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ তেজস্ক্রিয়তাএটি জীবনের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল ডিএনএ গঠনের পরিবর্তন অর্থাৎ মিউটেশন ঘটাতে পারেএর ফলে ৬ থেকে ৯ শতাংশ শিশু পঙ্গু হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে এবং এটা বংশ পরস্পরায় চলতে থাকেতেজস্ক্রিয়তার কারণে ক্যান্সারসহ ২০০০ জেনেটিক রোগ হতে পারেঅতিরিক্ত তেজস্ক্রিয়তার ফলে রক্ত গঠনের কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রের ওপর আলাদা প্রলেপ পড়ে; চোখে ক্যাটারাক্ট দেখা যায়চামড়ার পরিবর্তন সাধিত হয় এবং জীবকোষ তার সাধারণ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেউল্লেখ্য যে, তেজস্ক্রিয় পদার্থ একবার দেহে প্রবেশ করলে এটি রশ্মি বিকিরণের মাধ্যমে ক্ষতিসাধন করবেই এর কোনো সুচিকিৎসা নেইচেরোনোবিলে পারমাণবিক ঘটনার এতো বছর পরেও সেখানে এখনো পঙ্গু হয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করছেতাই তেজস্ক্রিয়তা মুক্ত সুস্থ পরিবেশ ব্যতীত সুস্থ জীবন কল্পনা করা যায় নাতিন পরমাণুবিশিষ্ট ওজোন গ্যাস ৯ মাইল পুরু আস্তরণ দ্বারা পৃথিবীকে আচ্ছাদন করে পৃথিবীর জীবজগতকে মহাজাগতিক অতিবেগুনি রশ্মির মারাত্মক দহন হতে রক্ষা করছেঅতিবেগুনি রশ্মির প্রতিক্রিয়ায় মানবদেহে চর্ম ক্যান্সার ব্যাপকতর হতে পারেশিল্পোন্নত বিশ্বের  রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, অ্যারোসল ও ফোমের ব্যবহারের ফলে ক্লোর ফ্লোরো কার্বন বা সিএফসি গ্যাসের উপজাত হিসেবে ক্লোরিন মনোঅক্সাইড ওপরে ভেসে ওঠে ওজোন স্তরকে ধ্বংস করছেওজোন স্তর সৌর বিকিরণের ৬% রশ্মি শোষণ করে১৯৮৫ সালে দেখা  গেছে ১৯৭৫ সালের তুলনায় এন্টার্কটিক ওজোন স্তরের ৫০% কমে  গেছে।  ওজোন স্তর এভাবে ধীরে ধীরে ভেঙে যাবেফলে অতিবেগুনি রশ্মি অতি সহজেই পৃথিবীর প্রাণীকুলকে ধ্বংস করতে থাকবেতাই এখন থেকেই আমাদের একমাত্র পৃথিবীর সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা উচিতবাংলাদেশের পরিবেশ পরিস্থিতির বিপজ্জনক অবস্থার কথা কাউকে স্মরণ করে দেয়ার প্রয়োজন নেইএখানে বছরের অধিকাংশ সময় থাকে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির তাণ্ডবএর মূল কারণ বনভূমি হ্রাসপরিবেশ অবনতির ফলে এ ধরনী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছেজীবন হচ্ছে অতিষ্ঠতাই সুস্থ্য পরিবেশ সুস্থ্য জীবনের পূর্বশর্ত

বিভিন্ন দেশের  সাম্প্রতিক  গবেষণার সামগ্রিক তথ্য থেকে জানা যায় একটি পূর্ণ বয়স্ক আম, জাম বা কাঁঠাল গাছ তার পাশে বাতাসের বেগকে ৭৫ ভাগ কমাতে সাহায্য করেগ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে সেই আম গাছটিই একশ গ্যালনের মতো পানি ট্রান্সপিরেশনের মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে দেয়ফলে তাপমাত্রা সে গাছের চারপাশে অনেক কমে যায়কিন্তু বনাঞ্চল উজারের সাথে সাথে নদী-নালার স্রোতের গতি প্রবাহ, গাছপালা জন্মানো উপযোগী মাটি বদলে যাচ্ছেওষুধ ও খাদ্য চাহিদার ওপর প্রভাব পড়ছেকারণ, ৭০০০ রকম উদ্ভিদ ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসলেও এখন অনেক প্রজাতির গাছ আর নেই

 
কুইজ
সায়েন্স ফিকশন
বিজ্ঞান প্রজন্ম
 বিজ্ঞান জিজ্ঞাসা
স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা
উদ্ভাবন
পরিবেশ
 সায়েন্স টুন
 কম্পিউটারজগত
 দেশের খবর
 প্রযুক্তি অনলাইন
 মনোবিজ্ঞান
 বিজ্ঞান বিশ্বের খবর
 অন্যান্য রচনা
 পার্শ্ব রচনা
 বিশেষ রচনা
হোমপেজ
 প্রচ্ছদ রচনা